নারীর ঝগড়াটে আচরণের রহস্য!

গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্রে বেশ বদনাম আছে নারীদের। একজন আরেকজনের কু-গাওয়া, সামনে ভালো কথা বললেও পেছনে কুৎসা রটানো, মিথ্যে গুজব ছড়ানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে মেয়েদের দিকে আঙ্গুল তোলে সবাই। এটা সবাই স্বীকার করবেন যে সবাই এক রকম না। একটা শিক্ষিত, আত্মবিশ্বাসী মেয়ে কখনও এ জাতীয় কাজ করবে না। কিন্তু বাকি সবাই? তাদের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা খাটে। স্বয়ং গবেষকরা বলেছেন এই কথা! সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা বেশি খাটে। নারীরা এক অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর পেছনে কারণ এটাই, যে পুরুষের সামনে তারা অন্যের চাইতে বেশি আকর্ষণীয় হতে চান। আর গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রতিযোগী নারীকে তারা নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা চালান। কানাডার অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পন্ন হয় এই গবেষণা এবং Philosophical Transactions of the Royal Society B জার্নালে এর তথ্য প্রকাশিত হয়।

“নারীরা বেশ হিংস্রভাবে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় নামেন,” বলেন এই গবেষণার সাথে জড়িত ট্রেসি ভ্যালিয়ানকোর্ট। তার মতে, এই হিংস্রতা প্রত্যক্ষ নয়, বরং পরোক্ষ। এ ধরণের আক্রমণ যে নারী করে থাকে সে নিজে কোনও ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন না হয়েই যেন প্রতিযোগীকে নির্মূল করতে পারে সে কারণেই এই পরোক্ষ প্রক্রিয়া। বেশিরভাগ সময়ে এই আক্রমণকারীর উদ্দেশ্য বোঝা যায় না কিন্তু এর পরেও তার আক্রমণ সফল হয়।

স্কুল-কলেজে উঠতি বয়সের মানুষের মাঝে এই ব্যাপারটা বেশ পরিষ্কার বোঝা যায়। ছেলেরা সাধারনত গায়ের জোরে অন্যদের মাঝে কর্তৃত্ব স্থাপন করতে চায়। কিন্তু মেয়েরা সেভাবে সরাসরি কোনও সংঘর্ষে যায় না। তারা অমার্জিত এবং রুঢ় আচরণ, গুজব রটানো এবং এ ধরণের পরোক্ষ আক্রমনের মাধ্যমে নিজের কর্তৃত্ব স্থাপন করে থাকে। এসব কারণেই চাঁচাছোলা কথা বলতে পারে এমন মেয়েদেরকে সবাই একটু সমীহ করে চলে। নিজের স্কুল-কলেজের স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করুন। মিলে যাচ্ছে না? এ থেকেই এ গবেষকরা ব্যাপারটি খতিয়ে দেখার চিন্তা করেন।

প্রশ্ন হলো, ছেলেদের চাইতে মেয়েদের মাঝে কেন এই ব্যাপারটা বেশি দেখা যায়। গবেষকরা ধারণা করেন, এর পেছনে বিবর্তনের কারসাজি রয়েছে। নইলে ব্যাপারটা এত সার্বজনীন হবার কথা নয়। আসলেও দেখা যায়, এই ব্যাপারটার কার্যকরীটা বেশি বলেই এটি এত বেশি পরিমাণে দেখা যায়।অনেক প্রাচীনকাল থেকেই পরিবারে নারীর একটা বড় ভূমিকা আছে, তা হলো বংশবিস্তার এবং বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মা যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে বা অন্য কোনও কারণে কাজ করতে না পারে তাহলে বাচ্চারা অসহায় হয়ে পড়বে। পরিবারের পুরুষ সদস্য অন্যের সাথে কর্তৃত্ব স্থাপনের লড়াইয়ে আহত হয়ে পড়লেও তেমন সমস্যা হবে না। কিন্তু নারী সেভাবে আহত হয়ে পড়লে সমস্যা। এ কারণেই নিজেদের শরীরকে ঝুঁকির মুখে যাতে না ফেলতে হয়, সে উদ্দেশ্যেই নারীরা এই পরোক্ষ কৌশল উদ্ভাবন করে অন্যকে হারিয়ে দেবার জন্য।

তবে শুধু নারীর মাঝেই যে এটা দেখা যায় তা নয় কিন্তু। প্রাপ্তবয়স্ক হবার পরে এই প্রবণতা পুরুষের মাঝেও দেখা যায় এবং এক্ষেত্রে অনেকেই নারীর চাইতেও বেশি পারদর্শী হয়ে ওঠেন! কিন্তু এতে মানসিক এবং সামাজিকভাবে সবচাইতে বেশি আহত হতে দেখা যায় নারীদেরকেই। তারা এসবের ফলে অন্য নারীর সাথে প্রতিযোগিতা করতে নিরুৎসাহিত হয়ে ওঠেন। যে নারী সাধারনত আক্রমণ করে সফল হন, দেখা যায় তার কপালেই জোটে পুরুষ সঙ্গীটি।

আরও একটি ব্যাপার দেখা যায়, যে সব নারীর যৌন আবেদন বেশি এবং তারা সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে বেশি আগ্রহী, অন্য নারীরা তাদের বিরুদ্ধে বেশি সক্রিয়। তারা এসব নারীর প্রতি দোষারোপ বেশি করে থাকেন। আরও একটি ব্যাপার দেখা যায়, তা হলো নারীরা যেসব ব্যাপারে বেশি আগ্রহী, সেসব নিয়ে বেশি প্রতিযোগিতা করে। সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে যে নারী বেশি উৎসাহী নন, তিনি এ ধরণের ঝগড়াটে আচরণ কম করবেন বলে ধরে নেওয়া যায়।


Share this article :

Post a Comment

 
Support : Home | Contact | Privacy Policy
Copyright © 2013. ChotiTimes - All Rights Reserved
Template Created by chotitimes.tk Published by Max
Proudly powered by Choti Family Ltd